রফিক একজন উদ্যোক্তা হতে চান। এইচ এস সি পরীক্ষা দেয়ার পর তিনি ঠিক করলেন ব্যক্তি উদ্যোগে একটি ক্ষুদ্র ব্যবসায় শুরু করবেন। কিন্তু তিনি কিছুটা সংশয়ে আছেন ব্যবসায়ের সফলতার ব্যাপারে। রফিকের মত বাংলাদেশে অনেকেই আছেন যারা হয়ত ক্ষুদ্র পরিসরে ব্যবসায় আরম্ভ করতে চান। 

আসুন জেনে নেই ক্ষুদ্র বা মাঝারি ব্যবসায় শুরু করার আগে কি কি মৌলিক বিষয় সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। 

Blog

১। ব্যবসায়ের পুঁজির সংস্থান    

ব্যবসায় লাভের মুখ দেখতে কতটা সময় লাগবে তা ব্যক্তিগত ব্যবসায়ের সাথে বড় ব্যবসায় তা নির্ভর করে মূলধন সময়ের উপর। কিন্তু ব্যবসায় পরিচালনার মৌলিক বিষয়গুলো একই দুই ক্ষেত্রেই কমবেশি একই থাকে। প্রথম ছয় মাস ব্যবসায়ে সফল ভাবে টিকে থাকতে আপনার ব্যাংক হিসেবে যথেষ্ট টাকার সংস্থান রাখতে হবে।

নিজের ব্যক্তিগত ব্যবসায়ের জন্য একটি বাস্তব সম্মত বাজেট তৈরি করতে হবে যেটা আপনাকে প্রথম কয়েক মাস ব্যবসায়ে টিকে থাকতে সাহায্য করবে। বাজেটটি এমন ভাবে করতে হবে যাতে পরিকল্পনার সাথে বেশি নড়চড় করতে না হয়। মাসিক ব্যয়ের একটি তালিকা তৈরি করে নিতে হবে আগে থেকেই, যাতে ব্যয় সম্পর্কে একটি ভালো ধারণা আগে থেকেই থাকে। যদি এরপরও অতিরিক্ত ব্যয় চলে আসে তবে হাতের টাকা সেটাকে সামাল দিতে পারবে। মোট কথা, হাতের পুঁজি ব্যবসা শুরুর প্রাথমিক ধাক্কা গুলোকে সামাল দিতে আপনাকে সাহায্য করবে। 

 ২। বিক্রয় মার্কেটিং কৌশল  

উদ্যোক্তাদের জন্য একটা কথা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সব সময় মনে রাখা চাই, সেটা হল ব্যবসায় প্রসারের জন্য প্রথম দিকের কাস্টমারগণ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যে কেউ হয়ত খুব ভালো পণ্য বা সেবা নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারে কিন্তু শুরুর দিকের কাস্টমার ছাড়া ব্যবসায় ব্যর্থ হওয়ার পথে এগিয়ে যাবে। প্রারম্ভিক কাস্টমারেদের সঠিক সেবাদানের উপর নির্ভর করে আপনার ব্যবসায়ের বৃদ্ধি দ্রুত গতিতে হবে নাকি ধীরগতিতে হবে।

আপনার বাজারজাতকরণ বা মার্কেটিং বাজেটের উপর নির্ভর করে একটি মার্কেটিং পরিকল্পনা করুন, যাতে আপনার প্রারম্ভিক কাস্টমারগণ প্রাধান্য পায়। শুরু থেকেই এমন ভাবে যুক্ত থাকুন যাতে আপনার সাথে তাদের বিশ্বস্ততার সম্পর্ক গড়ে উঠে। প্রারম্ভিক কাস্টমারদের ধরে রাখা সম্পর্ক তৈরির পরিকল্পনা করুন। পরবর্তীতে আপনার ব্যবসায়ের বিক্রয় কাঠামোবিক্রয় কৌশলচুক্তি, প্রস্তাবনা, পণ্যের তালিকা বা এমন কিছু যা গ্রাহকেরা ক্রয়ের সময় আপনার থেকে জানতে বা দেখতে চাইবে তা তৈরি করে ফেলুন। মোট কথা, শুরু থেকে বাজারজাত বিক্রয় গ্রাহক বান্ধব কৌশলের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুতি রাখুন।    

৩। সহনশীলতা   

উদ্যোক্তা হওয়ার সবচেয়ে কঠিন বিষয় হল আপনাকে অনেক বেশি সহনশীল হতে হবে, অনেক কঠোর পরিশ্রম করে নিজেকে স্থির রাখতে হবে। অনেকে এমনটি মনে করে যে, উদ্যোক্তা হওয়া মানে আমি স্বাধীন, আসলে ব্যাপার এতটা সহজ নয়। নিজের ব্যবসা পরিচালনা করতে গিয়ে আপনাকে ব্যবসায়ের দৈনন্দিন চাহিদা গুলো পূরণ করতে হবে। ব্যবসায়ের প্রথম ছয় মাস থেকে এক বছর সময়টা সবচেয়ে কঠিন।

ব্যবসায় শুরুর আগেই আপনাকে যাচাই করে নিতে হবে আপনি শারীরিক মানসিক ভাবে এর জন্য প্রস্তুত আছেন কিনা। সময়টাতে আপনাকে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হতে পারে, সেজন্য আগে থেকেই মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকুন। দিনে লম্বা সময়ের কাজ, ব্যক্তিগত ছুটি অন্যান্য অভ্যাস বাদ দেয়া লাগতে পারে, অনেক বেশি শারীরিক মানসিক চাপ সহ্য করা লাগতে পারে ব্যাপারে আগে থেকেই নিজেকে প্রস্তুত রাখুন। নিজের ব্যক্তিগত সময়ের বেশিরভাগটাই ব্যবসায়ের জন্য দিন। এসময়টাতে যদি আপনি নিজেকে ১০০ ভাগ দিতে না পারেন তবে ব্যবসায়ে পরিপূর্ণতা অর্জন করতে পারবেন না।    

৪। ব্যবসায়ের ভিত্তি গঠন 

ব্যবসায়ের সময়টাতে আপনার সম্পদের যোগানের সীমাবদ্ধতা থাকবে। সুতরাং, আপনার সময় অর্থ সঠিক জায়গায় ব্যবহার করতে হবে। যদিও সময়টাতে আপনার ব্যবসায় কি ঘটছে তা বোঝা আপনার জন্য সহজ হবে না কিন্তু আপনাকে প্রতিটি সংখ্যার প্রতি নজর রাখতে হবে।

বিক্রির উৎসগুলো কোথা থেকে আসে সেগুলো পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে, পণ্য বা সেবার ক্রয় মূল্যের সাথে বিক্রয় মূল্যের তফাৎ, শতকরা কতভাগ মুনাফা তা পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। যদিও আপনার প্রতিটি পণ্য ধরে এরকম হিসাব রাখা সহজ হবে না তবুও আপনাকে আপনার মত করে পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি ঠিক করে নিতে হবে।     

সহজ কথা হল আপনার ব্যবসা যেন একটি মজবুত ভিত্তির উপর দাড়ায়। অধিকাংশ ব্যবসা প্রথম বছরেই ব্যর্থতার মুখ দেখে। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে ব্যবসায়ে টিকে থেকে সফলতা পেতে গেলে আপনাকে দৃঢ় চিত্তে লেগে থাকতে হবে। এজন্যই বিশ্বখ্যাত সেলফ ডেভেলপমেন্ট কোচ লেখক ব্রায়ান ট্রেসি বলেছেন, “সাধারণ মানুষ যতক্ষণ ভালো লাগে ততক্ষণ কাজ করে, আর অসাধারণ সফল মানুষেরা ভালো না লাগলেও যতক্ষণ না কাজ শেষ হয়, ততক্ষণ কাজ বন্ধ করে না।

Leave a comment