যেকোনো কাজের মতই নতুন ব্যবসায় শুরু করার ধাপগুলো বেশ কঠিন। অধিকাংশ উদ্যোক্তা ঝোঁকের বশে ব্যবসায় শুরু করলেও প্রায়শই দেখা যায় কিছুদিন পর তা বন্ধ হয়ে গেছে। আবার অনেক ব্যবসায় ঠিক মতো শুরু হওয়ার পরেও দেখা যায় সঠিক দিক নির্দেশনার অভাবে লস–প্রজেক্ট হিসাবে গণ্য হয়েছে। ব্যবসায়ে সাফল্য লাভের জন্য ৭ টি উপদেশ, যা মেনে চললে আপনি ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তা হিসাবে ব্যর্থ হবেন না।
১। ঝুঁকি নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হন
আপনি বাজি খেলার সময় কখনই নিশ্চিত হতে পারেন না যে, সেটি জিতবেন নাকি হারবেন। অনুরূপভাবে আপনি ব্যবসায় শুরু করতে গেলেও লাভ–লোকসানের ব্যাপারে কখনো ১০০ ভাগ নিশ্চিত হতে পারবেন না। বিল গেটস যখন মাইক্রোসফট শুরু করেন তখন তিনি টেনশনে থাকতেন এই নিয়ে যে, কর্মীদের মাসিক বেতন দিবেন কীভাবে! সুতরাং বুঝতেই পারছেন উনার ঝুঁকিটা কত বড়মাপের ছিল। পৃথিবীর সবকিছুই অনিশ্চিত, এখনে কিছু পেতে হলে কিছু না কিছু ত্যাগ করতে হবেই। আপনি যদি আপনার চলার পথে উৎসাহ এবং সাহস ধরে রাখতে পারেন তাহলে আপনি সফল হবেনই। কোন কিছুই আপনাকে আটকাতে পারবে না।
২। সাফল্যের জন্য কখনই দ্রুত পদক্ষেপ নিবেন না
আপনি কোন কিছুই সহজে পাবেন না, এর জন্য ধৈর্য সহকারে চেষ্টা ও সংগ্রাম করে যেতে হবে। পল এলেন ও বিলগেটস মাইক্রোসফটের যাত্রা শুরু করেছিলেন একটি নড়বড়ে প্রতিষ্ঠান হিসেবে কিন্তু তাদের চেষ্টা ও পরিশ্রমের দরুন বর্তমানে মাইক্রোসফটের বাজারমূল্য ৫০,০০০ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি। একটি প্রবাদ আছে যে, There are no shortcuts to success. তাই পরিকল্পনা না করে তড়িৎগতিতে কোন সিদ্ধান্ত নিবেন না। সুনির্দিষ্ট প্ল্যান নিয়ে ব্যবসায় নেমে পড়ুন আর তাড়াহুড়ো না করে সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিন।
৩। আপনি যা তার জন্যই গর্বিত হোন
আমাদের বেশিরভাগই মানুষই হতাশায়–ভোগে এই কারণে যে, আমরা অন্যদের মত সফল, সম্পদশালী এবং বুদ্ধিমান না। আপনি চাইলেই বিল গেটস হতে পারবেন না কিন্তু আপনার এটা জানা উচিত যে, সব মানুষ এক রকম নয় , সবারই ইউনিক কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে যা অন্য কারো থাকে না। নিজের এই ইউনিক বৈশিষ্ট্যটি খুঁজে বের করুন এবং এর উপর আস্থা রাখুন সফল আপনি হবেনই। নিজের যত সক্ষমতা আছে তার সবকিছু ব্যবসায় ঢেলে দিন। আপনার ব্যবসায় পরিচালনায় প্রতিনিয়ত কলা–কৌশলে পরিবর্তন আনুন। ব্যবসায় করতে গেলে আত্মবিশ্বাস সবচেয়ে বড় শক্তি।
৪। সবসময় নম্র থাকুন
অনেকেই সফলতা পেয়ে নিজেকে আকাশচুম্বী মনে করা শুরু করে দেয়। যদি আপনিও তা মনে করেন তাহলে আপনি সফলতার তাৎপর্যই আসলে বোঝেন না। আপনি বিশ্বাস করুন আর না করুন, জীবন হলো একটি চাকার মত অর্থাৎ আনপ্রেডিকটেবল। আজ আপনার অবস্থান অনেক উপরে, কাল তলানিতে থাকা অসম্ভব কিছু না। আপনি সফলতার যত উপরেই উঠুন না কেন কোনসময়ই ভুলবেন না আপনি কোথায় ছিলেন। আপনার কর্মীদের সাথে সবসময় ভাল আচরণ করুন এতে তারা আপনার কোম্পানিকে সর্বোচ্চ বেনিফিট দিতে উৎসাহিত হবে। আপনার কোম্পানিকে তারা নিজের মনে করবে।
৫। সবকিছু ইতিবাচক–ভাবে নিন এবং শিখতে ভালবাসুন
ব্যবসার শুরুতে আমরা যদি সমালোচনা বা খারাপ প্রতিক্রিয়া পাই তাহলে আমরা উৎসাহ হারিয়ে ফেলি। কিন্তু আপনি যদি অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে দেখেন তাহলে বুঝতে পারবেন যে কাস্টমারদের সমালোচনাই আপনার শেখার সর্বোত্তম স্থান। ব্যবসায়িক কৌশলে আপনার ভুল কিংবা অসম্পূর্ণতাগুলো সবচেয়ে ভালোভাবে চিহ্নিত করা যায় কাস্টমারদের কাছ থেকে পাওয়া ফিডব্যাক হতে। কাস্টমারদের কাছ হতে আসা সমালোচনা এবং খারাপ প্রতিক্রিয়াগুলি ইতিবাচক–ভাবে নিন এবং এগুলোকে আপনার প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের প্রভাবক হিসেবে ব্যবহার করুন।
৬। ব্যর্থতাকে মেনে নিন এবং এগিয়ে যান
আপনি যখন সফল হবেন তখন সবাই আপনাকে সম্মান করবে, গুরুত্ব দিবে, সাহায্য করতে চাইবে। আপনার জীবন আনন্দে ভরপুর থাকবে। কিন্তু যখন ব্যর্থতায় পতিত হবেন তখন দেখবেন কেউ আপনাকে চিনবেই না, চারিদিকে অন্ধকার দেখবেন। তখন আপনি বন্ধু, শুভাকাঙ্ক্ষী কিংবা ব্যবসার কৌশল প্রভৃতির আসল রূপটা বুঝতে পারবেন। ব্যর্থতা আপনাকে যে শিক্ষা দিবে তা আর কোথাও হতে পাবেন না। আপনি জীবনে সফলতার যত উপরের অবস্থানেই যান না কেন ব্যর্থতা থেকে পাওয়া শিক্ষাগুলি ভুলবেন না, এই শিক্ষাগুলিই আপনার সফলতার প্রতিটা ধাপ গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।
৭। যত দ্রুত সম্ভব নিজেই নিজের বস হোন
বিল গেটস অল্প বয়সেই তার কোম্পানির বস হয়েছিলেন, যা তাকে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছে। আপনি যেই ব্যবসাই শুরু করতে চান না কেন, দেরি না করে আজই নেমে পড়ুন। যত দেরি করবেন আপনার মনোবল ততই কমে যাবে।
সর্বশেষ কথা হল, উদ্যোক্তাদের পথ সবসময়ই বাধা–প্রতিবন্ধকতায় পরিপূর্ণ হয়। তাই ব্যবসায় শুরুর আগে ব্যবসায়ের বিষয়টি নিয়ে প্রচুর স্টাডি করুন। কী করলে আপনার ব্যবসার প্রসার বাড়বে, লক্ষ্যমাত্রার মুনাফা অর্জিত হবে তা খেয়াল করে ব্যবসায়ের সিদ্ধান্তগুলো একে একে নিতে হবে। বিগত বছরের ভুলগুলির কারণ খুঁজে বের করুন এবং সেগুলো যাতে আর না হয় সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিন। আর হ্যাঁ পরিশ্রম, মূলত এর উপরই আপনার ব্যবসার বর্তমান–ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে।
1 Comment
Md kalim khan
100%good idea